ধরুন, রাত ২টা। হঠাৎ আপনার বাবার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলো, ঘামছেন অস্বাভাবিকভাবে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে- আপনার মনে হচ্ছে এটা হয়তো হার্ট অ্যাটাক! কিন্তু তখনই সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা সামনে আসে- এখন কোথায় নেবো? কোন হাসপাতাল সবচেয়ে দ্রুত, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য? বাংলাদেশের অনেক মানুষই ঠিক এই মুহূর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে প্রিয়জনকে হারান। তাই আগে থেকেই জেনে রাখা উচিত সেরা হার্ট অ্যাটাক জরুরী চিকিৎসা হাসপাতাল কোথায় এবং কেনো সেগুলো অন্যদের চেয়ে ভালো।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন, এবং তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মারা যান। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আধুনিক কার্ডিয়াক ইউনিট থাকা সত্ত্বেও অনেকেই জানেন না কোন হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা ইমারজেন্সি সেবা দেয়, কোথায় আছে ক্যাথল্যাব, কোথায় আছে অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট আর এনজিওগ্রাম সুবিধা। কিছু হাসপাতাল এমনও আছে যেখানে “ডোর-টু-ব্যালুন” টাইম (অর্থাৎ রোগী হাসপাতালে আসার পর এনজিওপ্লাস্টি শুরু করতে যত সময় লাগে) আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। এই ধরণের জীবনরক্ষাকারী তথ্য জানা প্রতিটি নাগরিকের জন্য জরুরি।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট (মিরপুর, ঢাকা)
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের অন্যতম সাশ্রয়ী ও বিশ্বস্ত হার্ট স্পেশালিস্ট হাসপাতাল, যা হৃদ্রোগ চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য স্বনামধন্য। এটি একটি সরকার-সহায়িত সংস্থা হলেও স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়, যেখানে উন্নত কার্ডিয়াক কেয়ার দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রেখে। ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি ইউনিটে হৃদ্রোগের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের জরুরি ব্যবস্থা যেমন ECG, ট্রোপোনিন টেস্ট, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, এনজিওগ্রাম এবং এনজিওপ্লাস্টি সুবিধা রয়েছে। এখানে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন, এবং হাসপাতালটি হৃদ্রোগের প্রাথমিক থেকে জটিল সব ধাপে চিকিৎসায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
এই হাসপাতালে রয়েছে অভিজ্ঞ কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিওলজিস্টদের একটি শক্তিশালী টিম, যারা রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন করে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত। হাসপাতালের একটি বড় সুবিধা হলো- এখানে চিকিৎসা খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম, তাই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য এটি একটি কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া, রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও গবেষণাও পরিচালিত হয়, যা দেশের সামগ্রিক হৃদ্রোগ চিকিৎসার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখে। সংস্থাটি হার্ট রিহ্যাবিলিটেশন, স্বাস্থ্য পরামর্শ, এবং দীর্ঘমেয়াদি ফলোআপের দিক থেকেও যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
ইউনাইটেড হাসপাতাল (গুলশান, ঢাকা)
ইউনাইটেড হাসপাতাল বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে আধুনিক কার্ডিয়াক চিকিৎসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় এখানে ব্যবহৃত হয় “ডোর-টু-ব্যালুন” টাইম কনসেপ্ট- অর্থাৎ রোগী হাসপাতালে আসার পর যত দ্রুত সম্ভব এনজিওপ্লাস্টি শুরু করা হয়। এই তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর প্রাণ বাঁচাতে বড় ভূমিকা রাখে। ইউনাইটেডের কার্ডিয়াক বিভাগে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ক্যাথল্যাব, ICCU, হাই-কেয়ার ইউনিট এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসজ্জিত এনজিওগ্রাম/ইকোকার্ডিওগ্রাফি ইউনিট, যা দ্রুত ও নির্ভুল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিশ্চিত করে।

হাসপাতালটির অন্যতম বিশেষত্ব হলো- এখানে কর্মরত কার্ডিওলজিস্ট, সার্জন এবং নার্সদের একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষিত টিম রয়েছে, যারা রোগীকে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা দেয়। যদিও চিকিৎসা খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি, তবু যারা নিরাপদ, দ্রুত ও উচ্চমানের হার্ট কেয়ার চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ। রোগীকে শুধু চিকিৎসাই নয়, স্নিগ্ধ পরিবেশে মানবিক সেবা দেওয়ার দিকেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এছাড়া পোস্ট-অ্যাটাক কেয়ার, রিহ্যাবিলিটেশন এবং ফলোআপ প্ল্যানিং-এ ইউনাইটেড হাসপাতাল উন্নত ব্যবস্থা বজায় রাখে, যা রোগীর দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতায় সহায়ক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU, শাহবাগ, ঢাকা)
BSMMU হলো দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, যা হৃদ্রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে উচ্চমানের বিশেষায়িত চিকিৎসা দিয়ে থাকে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখানে চিকিৎসা ব্যয় অনেকটাই সহনীয়, যা মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র রোগীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কার্ডিওলজি বিভাগের অধীনে রয়েছে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের একটি টিম, যারা প্রতিদিন শতাধিক রোগীর পরীক্ষা ও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, রিদম ডিজঅর্ডার বা এনজাইনা- যেকোনো কার্ডিয়াক সমস্যায় এখানে রয়েছে দ্রুত রোগ নির্ণয়ের সকল সুযোগ-সুবিধা, যার মধ্যে ECG, ইকো, ক্যাথল্যাব ও এনজিওগ্রাফি অন্যতম।
হাসপাতালটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো গবেষণার সঙ্গে চিকিৎসার সমন্বয়, যা চিকিৎসার মানোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এখানে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত হৃদ্রোগ বিষয়ক গবেষণা হয়, ফলে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু রাখতে হাসপাতালটি সক্ষম। রোগীর চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে খাদ্য, ব্যায়াম ও ওষুধসংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং রিহ্যাবিলিটেশন সুবিধাও রাখা হয়েছে। BSMMU-র সবচেয়ে বড় শক্তি হলো- দক্ষ জনবল ও সাশ্রয়ী সেবার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে উন্নত কার্ডিয়াক কেয়ার পৌঁছে দেওয়া।
অ্যাপোলো সায়িনার হেলথ (সাবেক এভারকেয়ার, বসুন্ধরা, ঢাকা)
অ্যাপোলো সায়িনার হেলথ, পূর্বে যেটি এভারকেয়ার নামে পরিচিত ছিল, বাংলাদেশের অন্যতম আধুনিক মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল। হার্ট অ্যাটাক বা অন্যান্য কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে এর দ্রুত রেসপন্স টাইম এবং প্রস্তুত অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। এটি ঢাকার অভিজাত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানকার পরিবেশ এবং পরিষেবা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এই হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ইউনিট ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট প্রোটোকলের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা নির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসার কার্যক্রম শুরু হয়।
হাসপাতালের হৃৎপিণ্ড সেবা ইউনিট অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সুসজ্জিত এবং এতে রয়েছে দক্ষ ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও সার্জনদের সমন্বয়ে গঠিত টিম। ECG, ইকোকার্ডিওগ্রাম, এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি সহ সব প্রকার কার্ডিয়াক টেস্ট এবং চিকিৎসা এখানে অত্যন্ত দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হয়। রোগী শুধু চিকিৎসা নয়, বরং রিকভারি, রিহ্যাবিলিটেশন এবং নিয়মিত ফলোআপেরও সুযোগ পান। যদিও ব্যয় কিছুটা বেশি, তবে যারা বিশ্বমানের সেবা খুঁজছেন, তাদের জন্য অ্যাপোলো সায়িনার হেলথ একটি উৎকৃষ্ট ঠিকানা।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজেস (NICVD, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা)
বাংলাদেশের হৃদ্রোগ চিকিৎসার ইতিহাসে NICVD একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। এটি দেশের সবচেয়ে পুরনো ও সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত বিশেষায়িত হৃদ্রোগ হাসপাতাল। হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, হৃদপিণ্ডের বাল্ব সমস্যা থেকে শুরু করে সবচেয়ে জটিল সার্জারি পর্যন্ত সব ধরনের হৃদ্রোগ চিকিৎসা এখানে করা হয়। প্রতিদিন শত শত রোগী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে রেফার হয়ে আসেন এবং সরকার পরিচালিত হওয়ায় চিকিৎসার ব্যয় অত্যন্ত কম ও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে।
NICVD-তে রয়েছে একটি শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ মেডিকেল টিম, যারা প্রতিনিয়ত ইমার্জেন্সি ও নিয়মিত চিকিৎসায় নিয়োজিত। এই হাসপাতালের একটি বড় সুবিধা হলো- এখানে প্রতিনিয়ত গবেষণা, মেডিকেল ট্রেনিং ও নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসন্ধান চলে, যার ফলে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোও আপডেট থাকে। হাসপাতালটির প্রসারিত ওয়ার্ড, জরুরি ইউনিট, উন্নত টেস্টিং সুবিধা এবং সার্বক্ষণিক সেবা হার্ট অ্যাটাক রোগীর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য সাপোর্ট সিস্টেম গড়ে তুলেছে। রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদানেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল (সেগুনবাগিচা, ঢাকা)
বারডেম জেনারেল হাসপাতাল মূলত ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য পরিচিত হলেও, এর কার্ডিয়াক বিভাগও বিশেষভাবে উন্নত ও কার্যকর। কারণ অনেক হার্ট অ্যাটাকের রোগীর মধ্যে ডায়াবেটিস সহ-অবস্থায় থাকে, আর বারডেম সেই যৌথ চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করে। এখানে কার্ডিয়াক ইমার্জেন্সি ইউনিটে অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা সদা প্রস্তুত থাকেন। ECG, ট্রোপোনিন টেস্ট, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, এনজিওগ্রাম সবই এখানে খুব অল্প খরচে সম্পন্ন করা যায়, যা নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির রোগীদের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ।

রোগীর আরামদায়ক চিকিৎসার জন্য বারডেমে রয়েছে প্রশিক্ষিত নার্স, খাদ্য ও পরামর্শ সেবা, এবং দীর্ঘমেয়াদি ফলোআপ ব্যবস্থা। অনেক সময় ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়ে না বা লক্ষণ স্পষ্ট হয় না, সেই বিষয়েও এখানকার বিশেষজ্ঞরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তাই বারডেম হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিল পরিস্থিতিতে একটি কার্যকর ও কম খরচে সমাধান দিতে সক্ষম হাসপাতাল হিসেবে বিবেচিত হয়। উন্নত প্রযুক্তির পাশাপাশি মানবিক চিকিৎসার জন্যও এই হাসপাতাল প্রশংসিত।
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল (ধানমণ্ডি, ঢাকা)
ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল বাংলাদেশের প্রথম ও অন্যতম বিশেষায়িত হৃদরোগ হাসপাতাল, যেখানে শুধুমাত্র হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত রোগের উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকায় অবস্থিত এই হাসপাতালটি ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি রেসপন্স সাপোর্ট প্রদান করে, যার মধ্যে রয়েছে উন্নত ক্যাথল্যাব সুবিধা এবং প্রশিক্ষিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি। হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের জন্য তাৎক্ষণিক ECG, ট্রোপোনিন টেস্ট, এনজিওগ্রাম, এবং প্রয়োজনীয় এনজিওপ্লাস্টি প্রক্রিয়াগুলো এখানে দ্রুত এবং সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালিত হয়।
এই হাসপাতালটির অন্যতম বিশেষত্ব হলো- ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিতে উচ্চমানের সেবা প্রদান, যেখানে জটিল হৃদরোগগুলোরও নন-সার্জিক্যাল সমাধান দেওয়া হয়। দেশের অভ্যন্তর থেকে শুরু করে বিদেশ থেকেও অনেক রোগী এখানে হৃদরোগের উন্নত সেবার জন্য আসেন। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী আধুনিক ICU, CCU এবং পোস্ট-অপারেটিভ কেয়ার ব্যবস্থা থাকায় চিকিৎসা পরবর্তী যত্নেও ল্যাবএইড শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। এছাড়াও রয়েছে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ফোনে কনসালটেশন ও ফলোআপ সুবিধা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক)
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) দীর্ঘদিন ধরে কার্ডিয়াক রোগীদের জন্য নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। এই হাসপাতালে রয়েছে অভিজ্ঞ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, ট্রেইনড মেডিকেল টিম এবং মূলত সাধারণ জনগণের জন্য সাশ্রয়ী খরচে চিকিৎসা প্রদান ব্যবস্থা। হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের জন্য জরুরি সিসিইউ, ECG, রক্তপরীক্ষা এবং ওষুধের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
চমেক হাসপাতালে ইমার্জেন্সি কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট ক্রমাগত উন্নতির মাধ্যমে রোগীদের জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ পার্বত্য জেলা থেকেও অসংখ্য রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে রয়েছে চিকিৎসা শিক্ষার সুযোগ, যা চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। সীমিত সম্পদেও চমেক দক্ষতার সঙ্গে প্রতিদিন অসংখ্য হার্ট অ্যাটাক রোগীকে জীবন ফিরে পেতে সাহায্য করছে।
রিজেন্ট হাসপাতাল (রাজশাহী শাখা)
রাজশাহী অঞ্চলের অন্যতম উন্নত কার্ডিয়াক সেবা কেন্দ্র হিসেবে রিজেন্ট হাসপাতাল (রাজশাহী শাখা) বিশেষভাবে পরিচিত। উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলা থেকে রোগীরা এখানে আসেন, বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাকের মতো জরুরি সমস্যায়। হাসপাতালটিতে রয়েছে সিসিইউ (CCU), এনজিওগ্রাম এবং হার্ট সার্জারির সুবিধা, যা এ অঞ্চলের রোগীদের ঢাকায় না গিয়ে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় ট্রেইনড মেডিকেল টিমের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
রিজেন্ট হাসপাতালের অন্যতম গুণ হলো, রোগীর জন্য তাৎক্ষণিক সেবা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অপারেশন থিয়েটারে দ্রুত স্থানান্তরের সুবিধা। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে রোগীর সময়ানুগ চিকিৎসা নিশ্চিত করাই হাসপাতালটির মূল লক্ষ্য। উন্নত পরিকাঠামো, দক্ষ ডাক্তার, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং মানবিক সেবার সমন্বয়ে রিজেন্ট রাজশাহী এখন একটি নির্ভরযোগ্য কার্ডিয়াক কেয়ার হাব হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (রমেক) হলো উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ও সরকার-পরিচালিত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, যা দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁওসহ গোটা রংপুর বিভাগের রোগীদের জন্য প্রধান আশ্রয়স্থল। এই হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগ অত্যন্ত সক্রিয় এবং প্রতিদিন বহু হার্ট অ্যাটাক রোগীর জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে রয়েছে ECG, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ব্লাড ট্রপোনিন টেস্ট এবং সিসিইউ সুবিধা, যা হার্ট অ্যাটাকের তাৎক্ষণিক নির্ণয় ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেক সময় ঢাকায় রেফার করার আগেই রোগীদের প্রাথমিক জীবনরক্ষাকারী সেবা এখানেই দেওয়া হয়, যা রোগীর জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়।

রমেক হাসপাতালের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর সাশ্রয়ী চিকিৎসা ও প্রশিক্ষিত ডাক্তারদের উপস্থিতি। যেখানে অনেক প্রাইভেট হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাক চিকিৎসা ব্যয়বহুল, সেখানে রংপুর মেডিকেল তুলনামূলকভাবে অনেক কম খরচে একই ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকে। হাসপাতালটি এখন আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এখানে ক্যাথল্যাব স্থাপন ও উন্নত ইন্টারভেনশনাল সেবা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। এছাড়া এখানে রোগীর আত্মীয়দের জন্য অপেক্ষাকক্ষ, ওষুধ প্রাপ্তি এবং রেফারেল ব্যবস্থাও অনেক সহজ ও জনবান্ধব। রংপুর বিভাগে যারা হার্ট অ্যাটাকজনিত জরুরি পরিস্থিতিতে পড়েন, তাদের জন্য রমেক হাসপাতাল এক বলিষ্ঠ ভরসার নাম।
হাসপাতাল বাছাইয়ের আগে যা যাচাই করবেন
- ২৪ ঘণ্টা ইমারজেন্সি সার্ভিস আছে কিনা
- সিসিইউ (CCU) বা আইসিইউ (ICU) সুবিধা রয়েছে কিনা
- ক্যাথল্যাব (Cath Lab) আছে কিনা – এনজিওগ্রাম বা এনজিওপ্লাস্টি জরুরি হলে
- ডোর-টু-ব্যালুন টাইম কত কম – যত দ্রুত এনজিওপ্লাস্টি শুরু হয়, তত ভালো
- অভিজ্ঞ কার্ডিওলজিস্ট ও ইন্টারভেনশনাল স্পেশালিস্ট রয়েছে কিনা
- অ্যাম্বুলেন্স সেবা কতটা দ্রুত পাওয়া যায়
- হাসপাতালটি সরকার অনুমোদিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিনা
- রোগী ভর্তি ও টেস্ট করানোর প্রক্রিয়া কতটা সহজ এবং দ্রুত
- প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জরুরি যন্ত্রপাতি সেই হাসপাতালে অব্যাহতভাবে মজুদ আছে কিনা
- পূর্ব অভিজ্ঞতা বা রোগীর রিভিউ (বিশেষ করে হার্ট কেয়ার সংক্রান্ত)
উপসংহার
হার্ট অ্যাটাক একটি মুহূর্তের ভুলে জীবন কেড়ে নিতে পারে। তাই পরিবারের সুরক্ষার জন্য সেরা হার্ট অ্যাটাক জরুরী চিকিৎসা হাসপাতাল গুলোর নাম, অবস্থান, সুবিধা এবং যোগাযোগ পদ্ধতি সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ভাবেন, দামি হাসপাতাল মানেই সেরা, কিন্তু বাস্তবে অনেক সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতাল আছে যারা দ্রুততা, দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত সুবিধার দিক থেকে যেকোনো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে। আপনার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত বাঁচাতে পারে একটি জীবন- এই আর্টিকেলে আমরা তুলে ধরব সেই হাসপাতালগুলোর তালিকা, পরিসেবা ও জরুরী যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা আপনার কঠিন মুহূর্তে হতে পারে সবচেয়ে বড় ভরসা।